দেশজুড়ে চলমান তীব্র দাবদাহে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চরম কষ্টে রয়েছে পথের অবহেলিত প্রাণিকুল ও গৃহপালিত পশুপাখি। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। টানা খরায় মাঠঘাট শুকিয়ে গেছে, রাস্তাঘাটে নেই কোনো ছায়া বা পানির ব্যবস্থা।মানুষ যেমন গরমে কাহিল, তেমনি পশুপাখিরাও হাহাকার করছে একটু স্বস্তির আশায়।দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, আজ মঙ্গলবার (১০ জুন) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৮.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা ছিল ৩৭.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৪৯ শতাংশ।বর্তমানে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বা আর্দ্রতাও অনেক বেশি হওয়ায় গরমের তীব্রতা অতীব মাত্রায় অনুভূত হচ্ছে।চলতি সময়ে ২৪ ঘণ্টায় বাতাসের গড় আর্দ্রতার পরিমাণ ৭০ শতাংশের ওপরে বিরাজ করছে, যা শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি ও অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলছে।এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে এবং তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগামীকাল ১১ জুন পর্যন্ত এ পরিস্থিতি বজায় থাকতে পারে। ১২ তারিখ থেকে মেঘলা আবহাওয়া দেখা যেতে পারে এবং হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।১৩ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত রংপুর বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।ভ্যাপসা গরমে জনপদ পুড়ছে। বিশেষ করে কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, মহিষ ও পাখিদের অবস্থা আরো করুণ। সরেজমিনে দেখা গেছে, পথের কুকুর রাস্তায় থাকা পানি কিংবা নালায় নেমে সাময়িক স্বস্তির চেষ্টা করছে। কোথাও কোথাও আবার পানির অভাবে ছটফট করতে দেখা গেছে।উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শাহরিয়ার মান্নান বলেন, ‘প্রাণীরাও মানুষের মতোই তাপমাত্রা পরিবর্তনের প্রতি সংবেদনশীল। অতিরিক্ত গরমে এদের শরীরে পানিশূন্যতা, খাদ্যে অনাগ্রহ, দুধ ও ডিম উৎপাদন কমে যাওয়া, আচরণগত পরিবর্তন, এমনকি তাপজনিত স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে আশ্রয়হীন কুকুর, বিড়াল ও পাখিরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।’তিনি আরো বলেন, ‘খামারিদের এখনই সতর্ক হওয়া উচিত। ছায়াযুক্ত আবাসন, ঠাণ্ডা ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, দিনে অন্তত একবার গোসল করানো এবং লবণ পানি বা ইলেকট্রোলাইট খাওয়ানোর মাধ্যমে পশুদের সুস্থ রাখা সম্ভব।’তীব্র দাবদাহ মোকাবেলায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে খামারিদের সচেতন করতে উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। একই সঙ্গে স্থানীয় পশুর হাটগুলোতে আগত পশুপাখিদের জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হাট ইজারাদারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।