নিত্য নিউজ প্রতিবেদক:
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড: মাহাদী আমিন বলেন, দেড় দশকের ভোটাধিকার হরণের পর বাংলাদেশ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের অপেক্ষায় ছিল। সেই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার অবশেষে একটি সময়সীমা ঘোষণা করেছে।
তবে বছরের সবচেয়ে খরতাপের সময়ে, পবিত্র রমজানের ঠিক পরপরই, আগামী এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণার ফলে উৎসবমুখর নির্বাচনের পরিবেশ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। শুধু প্রচার-প্রচারণা নয়, নির্বাচন আয়োজনের কর্মযজ্ঞ চালানো ও মাঠপর্যায়ের পরিচালনাও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে।
অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক ভিত্তি নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক ঐকমত্যের ওপর। সেই কারণে মূলধারার জনপ্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোর যৌক্তিক অবস্থানকে সম্মান করা সরকারের ন্যূনতম দায়িত্ব।
প্রায় সব রাজনৈতিক দল যেহেতু জাতীয় ঐতিহ্য, অনুকূল আবহাওয়া, বাৎসরিক ছুটি ও প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছে, সেই সময়কাল বা তার আশেপাশে একটি গ্রহণযোগ্য রূপরেখা দেওয়াই যুক্তিসঙ্গত হতো।
কিন্তু অনাকাঙ্খিতভাবে নির্বাচন এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে — যখন গ্রীষ্মের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পাবলিক পরীক্ষা, এবং রমজান মাসের কারণে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও কার্যকর প্রচারণার পরিবেশ থাকবে না। এপ্রিলে নির্বাচন হলে জুনে বাজেট ঘোষণার আগে নতুন সরকারের হাতে প্রস্তুতির সময় থাকবে খুবই কম — যা বাজেট প্রণয়নকে কঠিন করে তুলবে।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এখনো এপ্রিলে নির্বাচনের যৌক্তিক ব্যাখ্যা এমনকি বেসিক রোডম্যাপ দিতে পারেননি। বরং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঐক্য প্রতিষ্ঠাকে পাশ কাটিয়ে ও স্বঘোষিত ম্যান্ডেটকে প্রাধান্য দিয়ে, একপাক্ষিকভাবে যে টাইমফ্রেম ঘোষণা করেছেন, তা গণতন্ত্রকামী জনগণের আকাঙ্খার প্রতিফলন নয়।
সংস্কার ও বিচার নিয়ে প্রচুর কথা বলা হলেও, বাস্তবে গত দশ মাসে অর্থবহ অগ্রগতি দেখা যায়নি। তাই আগামী দশ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জন আগের দশ মাসের থেকে ঠিক কিভাবে আলাদা হবে এবং আদৌ তাঁদের সেই সক্ষমতা আছে কিনা, সেটিও স্পষ্ট নয়। মনে রাখা প্রয়োজন, সকল সরকার ও সরকারপ্রধানের ক্ষেত্রেই নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা প্রযোজ্য।
রাজনীতি সঠিক পথে এগোয় পারস্পরিক সম্মানবোধ ও মিউচুয়াল ট্রাস্টের ওপর ভিত্তি করে। এতগুলো রাজনৈতিক দলের যৌক্তিক অবস্থান তথা জনগণের প্রত্যাশাকে উপেক্ষা করে, অন্তর্বর্তী সরকার কেন পলিটিক্যাল গুডউইল হারিয়ে ট্রাস্ট ডেফিসিট বাড়াচ্ছে, এবং এর মাধ্যমে তাঁরা কী অর্জন করতে চাচ্ছেন — সেটি বোধগম্য নয়।
বিদ্যমান বাস্তবতায় অন্তর্বর্তী সরকার একটি সময়োপযোগী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী তারিখ ঘোষণা করবে বলে সুবিশাল জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা, যাতে নাগরিক আস্থা পুনরুদ্ধার হয় এবং ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার যাত্রা অব্যাহত থাকে।