আন্দোলন, কর্মবিরতির ঘোষণায় ঝুঁকিতে পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ

Uncategorized

টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা। কয়েক হাজার কর্মী ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যোগ দিয়েছেন। যাঁরা এলাকায় আছেন, তাঁরাও আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। এ কারণে বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত গ্রাহকসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে আরইবির বিদ্যুৎ সরবরাহ।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল আন্দোলনকারী কর্মীরা। এতে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন ছিল ওই সব এলাকার গ্রাহকেরা। এবার বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখে কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন। নিয়মিত সেবা না দিলেও জরুরি সেবা চালু রেখেছে তারা। তবে আজ থেকে জরুরি সেবাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সরকারি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। এসব সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে দুই দফা দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। এখন সাত দফা দাবিতে ছয় দিন ধরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন তাঁরা। গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, হাজার হাজার কর্মীর স্লোগানে মুখর হয়ে আছে শহীদ মিনার।আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ৪০ জন সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। ছয় হাজারের বেশি কর্মীকে নিজ এলাকা থেকে দূরের এলাকায় বদলি করা হয়েছে।গতকাল বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জরুরি সেবা চালু রেখে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মবিরতি পালন করা হবে। সমিতিতে অবস্থানরত মিটার রিডাররা মঙ্গলবার সকাল নয়টায় একযোগে রিডিং বই জমা দিয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। জনদুর্ভোগ বা সেবা বিঘ্নিত করে কর্মসূচি পালন করতে চান না তাঁরা। তাই দাবি মেনে নিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলছেন, অন্যথায় ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। এতে জনদুর্ভোগ তৈরি হলে এর দায়ভার বিদ্যুৎ বিভাগসহ সরকারকে বহন করতে হবে।গত বছরের শুরু থেকেই দুই দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা। আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়। একপর্যায়ে তাঁদের একজনের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে গত অক্টোবরে বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন তাঁরা। এর পর থেকেই কারও কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাসহ বিভিন্ন রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে থাকে আরইবি। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ৪০ জন সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। ছয় হাজারের বেশি কর্মীকে নিজ এলাকা থেকে দূরের এলাকায় বদলি করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র বলছে, এখন যাঁরা আছেন, তাঁদের ডিউটি বেশি দিয়ে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আন্দোলন দীর্ঘায়িত ও অনুপস্থিতির সংখ্যা বেশি হলে, তা আর সম্ভব হবে না।

কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষা

আন্দোলনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করলেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। এরপর গত বছরের ২৩ অক্টোবর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যমান পল্লী বিদ্যুৎ কাঠামো পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন দেবে তারা। গত ২৭ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, এক ও অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন করে আরইবি ও সমিতি একীভূত করতে হবে। তবে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে আপত্তি জানায় বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বলা হয়।

বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনে সেবা ব্যাহত হলে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। যাঁদের বিরুদ্ধে আগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাঁদের অপরাধ বুঝে শাস্তি লঘু করার বিষয়টি আরইবি চেয়ারম্যানকে দেখতে বলা হয়েছে। ঈদের পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করার কথা বিশেষজ্ঞ কমিটির। প্রতিবেদন দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে চলমান মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবিতে গত ২১ জানুয়ারি ও ২৬ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে তারা। এর সঙ্গে ২৮ হাজার ৩০৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষর জমা দেওয়া হয়। তাদের দাবির মধ্যে আছে, আরইবি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। এক ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি ও পবিস একীভূত করে অন্য বিতরণ সংস্থার মতো পুনর্গঠন। মিটার রিডার, লাইন শ্রমিক ও পোষ্য কর্মীদের চাকরি নিয়মিত করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *