বগুড়ায় শুরু হয়েছে জামাই বরন মেলা

Uncategorized

নিত্যনিউজ ডেস্ক:
কেল্লাপোশী দুর্গে নিশান উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী আনন্দ উৎসব চলে এবং সেখানে মাজার গড়ে তোলা হয়। তখন থেকেই চলে আসছে এ মেলা।
এই মেলা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে থাকে নানা আয়োজন। এরই একটি হচ্ছে মাদার খেলা। মেলা শুরুর সপ্তাহখানেক আগ থেকে গ্রামে গ্রামে চলে এ খেলা। একটি বড় বাঁশকে লাল কাপড়ে মুড়িয়ে ও নানা রঙে সাজিয়ে সেটির বিভিন্ন স্থানে চুল লাগিয়ে ১৫-২০ জনের একটি দল বেরিয়ে পড়ে। ঢাক-ঢোল, গান-বাজনার নানা সরঞ্জাম আর লাঠি নিয়ে তারা গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরের পাড়া-মহল্লাতেও খেলা দেখায়। দলটি মেলা এলাকায় অবস্থিত মাজার প্রাঙ্গনে গিয়ে তা জ্যেষ্ঠের দ্বিতীয় রবিবার তা শেষ করে।

আর এ মেলাকে কেন্দ্র করে আনন্দ উল্লাস আর উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় থাকে লাখো মানুষ। তারা প্রয় এক সপ্তাহ আগে থেকেই নানা ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। মেলা উপলক্ষে সবাই নিজ নিজ আত্মীয়স্বজনকে বাড়িতে দাওয়াত দিচ্ছেন। নিমন্ত্রণে থাকে নতুন-পুরনো জামাই-বউ রয়েছেন তালিকার শীর্ষে।

শ্বশুরালয়ে আসা জামাইরা ভিন্ন মৌজ মাস্তিতে থাকেন। কারণ মেলা উপলক্ষে জামাইদের মোটা অঙ্কের সেলামি দিয়ে থাকেন শশুররা। তখন জামাইবাবুরা সেই সেলামি আর নিজের গচ্ছিত টাকা দিয়ে মেলা থেকে খাসি কিনে শ্বশুরবাড়িতে আনেন। এমনকি বড় বড় মাটির পাতিল ভর্তি করে মিষ্টান্ন সামগ্রী, সবচেয়ে বড় মাছ, মহিষের মাংস, রকমারি খেলনা কেনেন। এছাড়া শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়ে মেলা ঘুরে ঘুরে দেখেন। তাদের সার্কাস, নাগোরদেলা, হুন্ডা খেলা, জাদু খেলা, পুতুল নাচ দেখিয়ে দিনব্যাপী আনন্দ শেষে ছাতা, ছোটদের কাঠের ও ঝিনুকের তৈরি খেলনা সামগ্রী নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরেন।

এ মেলায় সার্কাস, নাগোরদোলা, পুতুল নাচ, বিচিত্রা, হোন্ডাখেলা, কারখেলাসহ নানা অনুষ্ঠান চলে। সেই সঙ্গে জুয়াড়িরা পাল্লা দিয়ে মেলা দেখতে আসা সহজ সরল মানুষকে ঠকিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। মেলায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কেনাকাটার ধুম। দূরদূরান্ত থেকে আগত বিক্রেতারা এখানে দোকান সাজিয়ে জাঁকিয়ে বসেন।

এ মেলার প্রধান আকর্ষণ হলো বিভিন্ন ধরনের কাঠের আসবাবপত্র, মিষ্টি-ফলমূল, নানা জাতের বড় বড় মাছ, কুঠির শিল্প সামগ্রী, মহিষ ও খাসির মাংস, রকমারি মসলা। আর মেলা থেকে রকমারি মসলা, তুলা, কাঠের আসবাবপত্র, বড় বড় ঝুড়ি, চুন সারাবছরের জন্য কিনে রাখেন গ্রামের সাধারণ মানুষও।

যেহেতু মেলাতে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ঘটে, তাই সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের বিশে টহলের ব্যবস্থার কমতি থাকেনা।

সংশ্লিষ্ট শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. এসএম মঈনুদ্দিন বলেন, আমি এ থানায় নবাগত। ওই মেলার ঐতিহ্যের কথা জেনেছি। তবে যাই হোক মেলায় কোনো অশ্লীল যাত্রা, জুয়া বা অনৈতিক কার্যক্রম চলতে দেয়া হবে না। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *