পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ নির্দেশনা

Uncategorized নিত্য ব্যবসা-বাণিজ্য

 নিত্যনিউজ প্রতিবেদক:       


বিশেষ প্রতিনিধি                                   

দেশের পুঁজিবাজার আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই নির্দেশনা দেন।লুটপাটের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে বেসামাল করে দেওয়ার পেছনে কয়েক দশক ধরে যারা জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে না পারলে মানুষের আস্থা ফিরবে না জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শেয়ারবাজারকে যে অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা অকল্পনীয়। আমাদের অবশ্যই এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হবে।প্র্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শেয়ারবাজারের প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে এমন অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে, যেন মানুষ আস্থা ফিরে পায়; এটি যেন লুটেরাদের আড্ডাখানায় পরিণত না হয়।’প্রধান উপদেষ্টার পাঁচটি নির্দেশনা হলো—সরকারের মালিকানাধীন বহুজাতিক কম্পানিগুলোর শেয়ার হ্রাস করে সেগুলোকে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, দেশি বড় বেসরকারি কম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে উৎসাহিত করা এবং এ ক্ষেত্রে প্রণোদনামূলক নীতি গ্রহণ, স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি ঠেকাতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় তিন মাসের মধ্যে বাজার সংস্কারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, পুঁজিবাজারে অনিয়মে জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, বড় ধরনের অর্থের প্রয়োজনে কম্পানিগুলো যেন ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভর না করে পুঁজিবাজার থেকে বন্ড ও ইকুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে আগ্রহী হয় এ জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।

বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।

এলডিসি উত্তরণ মসৃণ করতে দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান প্রধান উপদেষ্টার : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মসৃণ ও সময়মতো উত্তরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন।

গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এলডিসি উত্তরণ কমিটির সঙ্গে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ আহবান জানান। বৈঠকে এলডিসি উত্তরণ কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।

এলডিসি উত্তরণ কার্যক্রমের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘এটা পুরোটাই সমন্বয়ের ব্যাপার। আমরা এরই মধ্যে বিনিয়োগকারী, অর্থদাতা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সমর্থন পেয়েছি।

এখন আমাদের বিদ্যমান উদ্যোগগুলোকে ভিত্তি করে একত্রে দ্রুত ও সুনির্দিষ্টভাবে অগ্রসর হতে হবে।’

প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইউনূস সব অংশীজনকে একত্রে কাজ করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের এমন একটি দল দরকার, যারা অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর মতো কাজ করবে। যখন সাইরেন বাজবে, তারা দ্রুত, দক্ষভাবে এবং বিলম্ব না করে প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত থাকবে।’
তিনি আশ্বাস দেন যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় (সিএও) এই প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উত্তরণ সম্পর্কিত সব উদ্যোগের বাস্তবায়ন ব্যক্তিগতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
বৈঠকে এলডিসি উত্তরণ কমিটি পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ চিহ্নিত করে, যেগুলো জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করতে হবে। পদক্ষেপগুলো হলো—সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার অংশগ্রহণে ‘ন্যাশনাল সিঙ্গল উইন্ডো’র পূর্ণ কার্যকরকরণ; একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে ‘জাতীয় শুল্ক নীতি ২০২৩’-এর বাস্তবায়ন; অবকাঠামো প্রকল্পসহ ‘জাতীয় লজিস্টিকস নীতি ২০২৪’-এর মূল কার্যক্রম বাস্তবায়ন; সাভার ট্যানারিপল্লীতে ইটিপি প্লান্টের কার্যক্রম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) পার্কের পূর্ণ মাত্রায় পরিচালনা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসব শুধু রুটিন কাজ নয়, প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের উত্তরণকে এগিয়ে নিতে এবং একটি শক্তিশালী ও ন্যায্য অর্থনীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুেফ সিদ্দিকীসহ এলডিসি উত্তরণ কমিটির সদস্য ও নীতিগত উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যক্তি বা সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশ অনুমোদন :  সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে এমন ব্যক্তি বা সত্তা এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে এই খসড়া অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৈঠকের সারসংক্ষেপে বলা হয়, ‘কতিপয় সন্ত্রাসী কার্য প্রতিরোধ এবং উহাদের কার্যকর শাস্তির বিধানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নের নিমিত্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়।

উক্ত আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারে। তবে বর্তমান আইনে কোনো সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো বিধান নাই। উক্ত বিষয়টি স্পষ্টীকরণসহ বিধান সংযোজন আবশ্যক হওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-কে সময়োপযোগী করিয়া উক্ত আইনের অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজন।

বর্ণিত প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করিয়া সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, প্রয়োজনীয় অভিযোজন করা এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধকরণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *