বগুড়ার সাবেক ও বর্তমান চার পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৭জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

নিত্য তথ্য বগুড়া

নিত্য ডেস্ক :

বগুড়ায় কর্মরত সাবেক ৪ পুলিশ কর্মকর্তা সহ গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের (ডিবি) ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উচ্চপদস্থ ১৭ কর্মকর্তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেছে গুম কমিশন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ১০ জন র‌্যাব সদস্য, ৪ জন ডিবি সদস্য ও সিটিটিসির ৩ সদস্য। এদের মধ্যে বগুড়ার সাবেক ও বর্তমান চার কর্মকর্তা রয়েছেন।
গুম কমিশন এসব কর্মকর্তার নাম, অপরাধের ধরন এবং বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অবহিত করেছে। রাতেই এ সুপারিশ কার্যকরের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বহিরাগমন নিয়ন্ত্রণ শাখায় এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
বগুড়ার সাবেক ও বর্তমান অভিযুক্তরা হলেন– বর্তমানে বরিশাল দক্ষিণ রেঞ্জে কর্মরত ডিসি ও বগুড়ার সাবেক এসপি মো. আলী আশরাফ ভূঁইয়া। বর্তমানে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি বগুড়ার সাবেক অ্যাডিশনাল এসপি মো. আরিফুর রহমান মন্ডল, বর্তমানে পুলিশ হাসপাতাল বগুড়ার ইন্সপেক্টর ডিবির সাবেক ওসি নুর ই আলম সিদ্দিকী, বর্তমানে ওসি এপিবিএন ৭-এর কর্মরত এবং বগুড়ায় ডিবির সাবেক সাব-ইন্সপেক্টর মো. জুলহাস উদ্দিন।

র‌্যাবের অভিযুক্তরা হলেন সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডিশনাল আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন, সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডিশনাল আইজিপি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশীদ, সাবেক এডিজি (অপারেশন) কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক এডিজি (অপারেশন) কর্নেল মো. আনোয়ার লতিফ খান, সাবেক এডিজি কর্নেল কেএম আজাদ, সাবেক এডিজি কর্নেল মো. কামরুল হাসান, আন্তর্জাতিক উইংয়ের সাবেক ডিরেক্টর লে. কর্নেল মুহাম্মদ খাইরুল ইসলাম (আর্টিলারি), আন্তর্জাতিক উইংয়ের সাবেক ডিরেক্টর লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল, আন্তর্জাতিক উইংয়ের সাবেক ডিরেক্টর লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, আন্তর্জাতিক উইংয়ের সাবেক অ্যাডিশনাল এসপি শ্যামল চৌধুরী।

সিটিটিসির অভিযুক্তরা হলেন- বর্তমানে রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত সাবেক এডিসি মো. আহমেদুল ইসলাম, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত সাবেক এসিপি এডিসি আতিকুর রহমান চৌধুরী ও বর্তমানে সিলেট রেঞ্জে বদলিকৃত সাবেক এডিসি মো. জাহিদুল হক তালুকদার।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, সঠিক বিচারের স্বার্থে গুম কমিশন এই ১৭ ব্যক্তির নামের তালিকা অবহিত করেছে। বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরকে যথাযথ করণীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত, তা তাদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়। এতে কমিউনিটিকে দোষারোপের কোনো সুযোগ নেই। গুমের ঘটনায় পুরো বাহিনীকে দায়ী করা হবে, এমন ধারণা ভুল। কোনো বাহিনীর সদস্যদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’ তিনি আরও জানান, গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে নাগরিকদের গুম করার অভিযোগ আছে, তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনুসন্ধান করছে।

সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের কার্যক্রমের সবশেষ তথ্য বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এ সময় জানানো হয়, গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জনের অবস্থা নিয়ে অনুসন্ধান চললেও তাদের বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এর আগে ডিজিএফআই সদর দপ্তর, সিটিটিসির সদর দপ্তর, র‌্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন ও পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়ার কথা শোনা গেলেও এই প্রথম পুলিশ লাইনে এ ধরনের বন্দিশালার তথ্য দেয় গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *